নাইট ক্যুইন বা নিশিপদ্ম, নামটি শুনে সহজেই অনুমান করা যায় যে রাতের আঁধার আলো করে ফোটে ফুলটি। সৌন্দর্য,সৌরভ,প্রস্ফুটন সব মিলে ফুলটিকে দিয়েছে রাণীর আসন। নামকরণ ও সার্থক। এই ফুলকে অনেকেই নিশিপদ্ম বা নিশিগন্ধা নামে জানেন। এছাড়া একে সৌভাগ্যের প্রতীক বলা হয়। মনে করা হয় যে বাড়ীতে ফুলটি ফোটে তাঁর বাড়ীতে সৌভাগ্য বয়ে আনে। সন্ধ্যা থেকেই এর ফুল ফোটা শুরু হয়। একসময় সবগুলো পাপড়ি ছড়িয়ে অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দেয় চারদিকে। ক্যাকটাস জাতীয় এই গাছের আদি নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল ও মেক্সিকো। তবে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ও এই ফুলের অবাধ বিচরণ। ফুলপ্রেমীদের হাত ধরে এই ফুল আমাদের দেশে বিস্তার লাভ করেছে। এর ইংরাজী নাম Dutchmans pipe ও Queen of The Night.উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Epiphyllum oxypetalum.
এটি মূলত: বর্ষার শুরু থেকে প্রায় নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ফোটে। কিন্তু কখনো কখনো ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ফুল ফুটতে দেখা গেছে I বর্ষার শুরুতে যখন তাপমাত্রা 28-30 ডিগ্রি থাকে তখন নিশিপদ্ম এর বিস্তারিত রূপ তুলে ধরে। এই ফুল যে রাতে ফোটে তার 72ঘন্টা আগে থেকেই কলিগুলো অদ্ভুত সাজে সাজতে থাকে। তখনই বোঝা যায় ওর ফোটার সময় আসন্ন। রাত 7-1 টার মধ্যে এই ফুল তার কাঙ্খিত রূপটি ধরে। এইরূপ ধরে নাইট ক্যুইন তার সৌরভ ছড়ায় পরের দিন ভোর 5-6টা পর্যন্ত। সূর্যের দাপটের সাথে সাথে এই ফুল নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে এবং একসময় ঝরে যায়। এক কথায় প্রতীক্ষার যে ধৈর্য্য,তারই প্রতীক এই নিশিপদ্ম। রাতের আঁধারে ফুটে রাত শেষ হওয়ার আগেই ঝরে যায় তাই অনেকেই একে দুর্লভ ফুল হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। এই ফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক তাই নয়, এর আর ও একটি বিশেষত্ব হল বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার,টিউমার ছাড়াও অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি হিসাবে এর ব্যবহার প্রচুর I
আজ এই পর্বে এই নিশিপদ্মের সম্পূর্ণ পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি ।
বি:দ্র :– ঘরে বসে যদি তুমি গাছ ও গাছের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌল পেতে চাও, তাহলে 8972774914 হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করে তোমার পছন্দমত গাছ অর্ডার দিতে পারো I শুধুমাত্র ভারতীয়দের জন্যই প্রযোজ্য I
টব নির্বাচন
এই গাছ যেহেতু রুট বাউন্ড খুবভালোবাসে তাই এই গাছ প্রতিস্হাপনের জন্য সবসময় 8 বা 10ইঞ্চি টব নির্বাচন করতে হবে, এর কম নয় I
মাটি :- এই গাছের জন্য জলনিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত ও বায়ুচলাচলের উপযোগী মাটির প্রয়োজন। এর জন্য দরকার এক ভাগ গার্ডেন সয়েল(হাতের কাছে যে ধরণের মাটি আছে),এক ভাগ বিল্ডিং তৈরী করার লাল বালি, এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা একবছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতাপচা সার এবং মাটির ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য এক ভাগ কোকোপিট। এর সাথে 8 এবং 10ইঞ্চি টবের জন্য দেড়চামচ হাড়গুঁড়ো বা এক চামচ ফসফেট মেশাতে হবে।
আলো :- এই গাছটি জঙ্গলের গাছ হওয়ায় ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে। কিন্তু একদম অন্ধকার জায়গায় না রাখাই ভালো। যেখানে সকালের মিষ্টি রোদ আসে কিন্তু রোদের তীব্রতা আসে না এমন জায়গাতেই গাছটা রাখা ভালো। তাই তুমি খুব সহজেই এটি ঘরের মধ্যে অথবা বারান্দার এক কোণে অথবা ব্যালকনিতে খুব সহজে গাছটি করতে পারবে I
জল :- এই গাছ মাটির ময়েশ্চার ভালোবাসে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই গাছের গোড়ায় জল না জমে। জল জমলে পাতা ও ফুল আসার ওপর প্রভাব পড়বে। তাই এমনভাবে জল দিতে হবে যাতে সবসময় মাটির ময়েশ্চার বজায় থাকে। কিন্তু কোনভাবেই যেন মাটি একেবারে ভিজে চুপচুপে হয়ে না থাকে তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে জলের আধিক্যের কারণে গাছের গোড়া পচে যাবে, অবশেষে মারা যাবে i
খাবারের ব্যবস্থাপনা :- এই গাছ কম নাইট্রোজেন যুক্ত খাবার ভালোবাসে। এর জন্য এক চামচ হাড়গুঁড়ো,হাফ চামচ পটাশ অথবা এক চামচ ফসফেট, হাফ চামচ পটাশ ভালো করে মিশিয়ে মাসে একবার দিতে হবে। এছাড়া ছয় মাস পর পর এই সারের সাথে এক চামচ ইউরিয়া মিশিয়ে দিতে হবে। সার দেওয়ার আগের দিন অবশ্যই মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
বি:দ্র :-তুমি যদি আমার তৈরী গাছের জন্য বিশেষ পুষ্টিমৌল ব্যবহার করো তাহলে আর অন্য কোন সারের ব্যবহার করার দরকার পড়বে না I পেতে চাইলে 8972774914 হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারো I
রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :- এই গাছে কোন পোকার আক্রমণ দেখা যায় না। তবে পাতায় দাগ দেখা যায়। পাতা পচে যায়। পাতা পচে যাওয়ার কারণ হল মাটিতে জলের আধিক্য। পাতায় দাগ হয় ফাঙ্গাস আক্রমণের জন্য। এর জন্য সাফ/ম্যানসার/ব্লাইটক্স/M45 এক লিটার জলে এক গ্রাম দিয়ে ভালো করে ঝাঁকিয়ে সাতদিন বা দশদিন পর পর স্প্রে করতে হবে ।
এই হল নিশিপদ্মের সম্পূর্ণ পরিচর্যা। এই পর্বটি সম্পূর্ণ অনুসরণ করে বাড়ীতে নিশিপদ্মের গাছ লাগিয়ে বিধাতার অপরূপ সৃষ্টিকে চাক্ষুস ও উপভোগ করার অনুরোধ রইল। সকলকে অনেক ধন্যবাদ।🙏
I shall contact on Whatsapp…