ফিলোডেনড্রন মোটামুটি অজানা একটি ফ্যামিলি। প্রায় 400 প্রজাতির গাছ এই ফ্যামিলির অন্তর্ভূক্ত। এই ফিলোডেনড্রন ফ্যামিলির প্রজাতি 1644 সালে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ,ক্যারিবিয়ান ও কলাম্বিয়ার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। এই ফ্যামিলির গাছগুলি আশেপাশের সমস্ত গাছ থেকে বেশ অনেকখানি লম্বা হওয়ায় একে গ্রীক্ ভাষায় “tree hugger” বা “love tree”বলা হয়।
এই ফিলোডেনড্রন ফ্যামিলিরই দুটি গাছ Philodendron pedatum এবং Philodendron squamiferum প্রজাতি দুটির সংকরায়ণের ফলে একটি নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে যার নাম ফিলোডেনড্রন ফ্লোরিডা ঘোষ্ট।
গাছটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য :–
গাছটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য গাছটি এই প্রজাতির অন্যান্য গাছগুলির মধ্যে অনন্য। এই গাছটির পাতা কচি অবস্হায় ফ্যাকাশে বর্ণের হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পাতা ফ্যাকাশে সবুজ বা হলুদ বর্ণের হয়। অবশেষে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে।গাছটির আর ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই গাছটি পারিপার্শ্বিক বাতাসকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। তাই এই গাছের চারপাশ বিশুদ্ধ অক্সিজেন এ পরিপূর্ণ থাকে।
যারা খুব কম আলোর জন্য বাড়ীতে গাছ করতে পারছ না তাদের এবং বিশেষত: নতুন বাগানিদের কথা মাথায় রেখে আজ ফিলোডেনড্রন ফ্লোরিডা ঘোষ্ট এর সম্পূর্ণ পরিচর্যা এই পর্বে আমি আলোচনা করব।
এই গাছটি একটি লতানে গাছ। তাই গাছটি বসিয়ে কিছুদিন গাছটিকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। একটু বড়ো হলে একটি মস স্টিকের সাহায্যে গাছটিকে ঠেকনা দিয়ে রাখতে হবে।
বি:দ্র :– প্রসঙ্গত: বলে রাখি ঘরে বসে এই গাছটি এবং এই সমস্ত হাউস প্লান্ট এর বিশেষ পুষ্টিমৌল নিতে চাইলে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর 8972774914 এ যোগাযোগ করতে অনুরোধ করছি।
মাটি প্রস্তুতি :–
এই গাছের মাটি তৈরী করতে দরকার একভাগ গার্ডেন সয়েল (হাতের কাছে যে ধরণের মাটি আছে),দুভাগ বিল্ডিং তৈরী করার লাল বালি, এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা একবছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতা পচা সার এবং একভাগ কোকোপিট। এর সাথে আট ইঞ্চি টবের জন্য এক চা চামচ আর 10ইঞ্চি টবের জন্য দেড় চা চামচ ফসফেট মিশিয়ে নিতে হবে। সব কিছু ভালকরে মিশিয়ে সম্ভব হলে চালুনি দিয়ে চেলে নিতে হবে।
টব নির্বাচন :–
ছোট গাছ প্রথমে আট ইঞ্চি বা 10 ইঞ্চি টবে বসাতে হবে। এর এক থেকে দেড় বছর পর 12 ইঞ্চি টবে পুনরায় বসানো যেতে পারে।গাছ বসানোর 6মাস পর একটি মস স্টিক দিয়ে ঠেকনা দিয়ে দিতে হবে। ফলে গাছটি সুন্দর ভাবে বেড়ে উঠবে এবং দেখতে সুন্দর লাগবে।
আলো :–
গাছটিকে খুব কড়ারোদ বা একেবারে অন্ধকার জায়গায় রাখা যাবে না। যেখানে উজ্জ্বল আলো আসে বা কম আলো আসে সেইসব জায়গায় রাখতে হবে। ঘরের মধ্যে কৃত্রিম আলো জ্বালিয়ে ও গাছটি রাখা যেতে পারে।
জল :–
গাছটি প্রতিস্থাপন করে ভরপুর জল দেওয়ার পর সেই জল টবের তলা দিয়ে সম্পূর্ণ বেরিয়ে যাওয়ার পর টবের তলায় একটা বেস প্লেট রাখতে হবে। পরবর্তী সময়ে সেই বেস প্লেট এ জল ভর্তি করে দিলে গাছ তার প্রয়োজনীয় জল সেখান থেকেই নিতে পারবে। লক্ষ্য রাখতে হবে সবসময় মাটির ময়েশ্চার যেন বজায় থাকে। কখনই মাটি যেন চুপচুপে ভিজে না থাকে বা একেবারে শুকিয়ে না যায় । এছাড়াও এক সপ্তাহ অন্তর অন্তর গাছটা বাইরে এনে ভালো করে স্নান করানো ও যেতে পারে।
খাবারের ব্যবস্হাপনা :–
হাউস প্লান্টের জন্য তৈরি একটি বিশেষ পুষ্টিমৌল আমি দিয়ে থাকি , যদি তুমি ওই পুষ্টিমৌল ব্যবহার করো তবে সেই পুষ্টিমৌল তিনমাস অন্তর অন্তর একবার করে দিলে আর কিছু দেওয়ার দরকার পরবে না। যদি ওই বিশেষ পুষ্টিমৌলটি তোমার কাছে না থাকে তাহলে তুমি NPK 19.19.19 বা 20.20.20 সারটি 1 লিটার জলে 1 গ্রাম পরিমাণ হিসেবে ভাল করে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে পারো এবং মাটি ভিজিয়ে ও দিতে পারো দুমাসের ব্যবধানে I
রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :–
এই গাছের পাতায় একটা লিফ্ স্পট দেখা যায় যেটা ছত্রাকঘটিত রোগ। এর জন্য সাফ এক লিটার জলে একগ্রাম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে15 দিন অন্তর অন্তর। ঘরের মধ্যে গাছটি থাকলে এই স্পট খুব কম আসে। যদিও বা আসে সেটা পুরোনো পাতাতেই দেখা যায়।সেক্ষেত্রে ওই পাতাটি কেটে ফেলতে হবে।
যদি গাছটি রোদে রাখা হয় তবে মিলিবাগের আক্রমণ হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ইমিডাক্লোরোপিড কম্পোজিসনের কনফিডার এক লিটার জলে 5ফোঁটা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে 10দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।
এই হল ফিলোডেনড্রন ফ্লোরিডা ঘোষ্টের সম্পূর্ণ পরিচর্যা। একে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করতে ওপরের সম্পূর্ণ পদ্ধতি অনুসরণ করার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ সকলকে।🙏🙏🙏