“পলাশের কুঁড়ি,
একরাত্রে বর্ণবহ্নি জ্বালিল সমস্ত বন জুড়ি”।
পলাশ(Butea monosperma) আমাদের কাছের ফুল। বাংলায় কিংশুক,পলাশক,বিপর্ণক, ইংরেজিতে flame of forest,bastard teak,bengal kino tree,parrot tree নামেও পলাশ পরিচিত। পলাশ বাঙালীর ফুল। ফাল্গুনের-বসন্তের ভালোবাসার ফুল। বিরহ-বিদ্রোহের প্রতীক। এই ফুলের আরো একটা নাম আছে। “অরণ্যের অগ্নিশিখা”। শীতের কশাঘাতে যখন পাতারা ঝড়ে যায়,তখন রিক্ত পলাশের কোল জুড়ে আসে সহস্র রক্তিম পলাশ ফুল। তখন মনে হয়,বনে আগুন লেগেছে। নবীন পাতার সমারোহ তখন বনজুড়ে দেখে এই পলাশের বর্ণমিছিল। বাংলা সাহিত্যে পলাশের প্রভাব অতিশয়। গানে,কবিতায় কোথায় নেই পলাশ। তবে শুধু একালের সাহিত্য নয়,পলাশ সুপ্রাচীনকালেও ছিল সমান আদরণীয়। পলাশের জন্মস্থান বাংলাদেশ-ভারত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া নেপালেও জন্মায়। শহরাঞ্চলে এ ফুল অপ্রচুর হলেও গ্রামে গঞ্জে প্রচুরই বলতে হবে।
পলাশের ব্যবহার :-
পলাশের বিভিন্ন অংশ ভেষজ শিল্পে ও অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। পলাশ গাছের শিকড় দিয়ে একসময় মজবুত দড়ি তৈরী হতো।পলাশের পাতা দিয়ে তৈরী হয় থালা,বাটি। ফুল থেকে যে হলুদ রঙ পাওয়া যায় তা দোলের রঙ তৈরীতে কাজে লাগে। এছাড়া পলাশ পাতা উদরাময় অজীর্ন,জ্বরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঠ,হোম ও উপনয়ন অনুষ্ঠানের উপকরণ বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পলাশ অত্যন্ত পবিত্র একটি গাছ। হিন্দু ধর্মমতে গাছের ত্রিপত্র ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু ও শিবের প্রতীক। সরস্বতী পুজোর অন্যতম প্রধান উপকরণ এই পলাশ ফুল।
আজ আমি এই পর্বে পলাশফুল গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করব।
বি:দ্র :- আর তুমি যদি ঘরে বসে এই গ্রাফটেড পলাশ(হলুদ/ লাল) গাছের চারা পেতে চাও অথবা অন্য কোন গাছ পেতে চাও অথবা গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি মৌল পেতে চাও তাহলে 8972774914 নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল I
মাটির ব্যবস্থাপনা :–
এই গাছের জন্য উচ্চ জল নিকাশি ক্ষমতাসম্পন্ন মাটি দরকার হয় যে মাটিতে কোনভাবেই জল দাঁড়ায় না। জল দেওয়ার সাথে সাথেই জল বের হয়ে যায়।
প্রথম পদ্ধতি :–
একভাগ গার্ডেন সয়েল(হাতের কাছে যে ধরণের মাটি আছে), একভাগ নদীর সাদা বালি(river sand/silver sand/horticultural sand), একভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতা পচা সার।
দ্বিতীয় পদ্ধতি :–
তিন ভাগ ইঁট ভাটার রাবিশ(দু মিমি চালুনি দিয়ে চেলে নেওয়া), এক ভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতা পচা সার।
আলোর ব্যবস্থাপনা :–
প্রতিস্থাপনের পর দুদিন একটু ছায়াযুক্ত জায়গায় আর রাত্রে খোলা আকাশের নীচে রাখতে হবে। তারপর থেকে সরাসরি সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখতে হবে।
জলের ব্যবস্থাপনা:–
এই গাছের জলের চাহিদা খুব বেশি নেই। তবে একবার জল দেওয়ার পর যতদিন না মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে ততদিন জল দেবার প্রয়োজন নেই। মাটি শুকিয়ে গেলে আবার ভরে জল দিতে হবে।
খাবারের ব্যবস্থাপনা :–
এই গাছের খাবারের চাহিদা ও সেরকম নেই। তবে মাসে একবার বা দু মাসে একবার এক মুঠো সরষের খোল দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া আমার কাছে একটা Special Blend Fertilizer পাওয়া যায়। এটা ব্যবহার করলে আর অন্য কোন কিছু ব্যবহার করার দরকার পড়বে না। যদি এই fertilizer নিতে চাও তবে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে 8972774914 যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল।
বি:দ্র :– সার দেওয়ার আগের দিন অবশ্যই টবের মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ :–
গাছের কুঁড়ি আসার সময় এফিডস এর আক্রমণ হতে দেখা যায়। তাই এর জন্য ডাইমেথয়েড 30%কম্পোজিসনের যেকোন কীটনাশক রোগর/রোগর প্লাস/টাফগর এক লিটার জলে তিরিশ ফোঁটা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে দশ দিন অন্তর অন্তর।
ডাইব্যাক হলে শুকিয়ে যাওয়া অংশের নীচ থেকে কিছুটা কেটে দিয়ে কাটা অংশে যেকোন ফাংগিসাইড সাফ/ব্যাভিস্টিন/ম্যানসার/M45 পেস্ট করে লাগিয়ে দিতে হবে। এছাড়া আর কোনরকম রোগ এই গাছে দেখা যায় না।
এই সম্পূর্ণ পর্বটি অনুসরণ করে তোমাদের ছাদবাগান বসন্তে পলাশের রঙে রঙীন হয়ে উঠুক এই আশা রাখি।সকলকে ধন্যবাদ।🙏🙏