নন্দিনী ফুলগাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা

Arindam Hait A

হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে গোলাপ। আবার পাতাসহ ডগা দূর থেকে অনেকটা টিউলিপের মতো দেখায়। রঙের ও ছড়াছড়ি। প্রায় পঁয়তাল্লিশটি রঙের এ  ফুলটি ইউস্টোমা নামেই বেশি পরিচিত। বর্ণবৈচিত্র‍্যের কারণে ফুলটি অল্প সময়ের মধ‍্যে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুলের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে। ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বত এলাকায় ইউস্টোমার উৎপত্তি। মেক্সিকো,ক‍্যারিবীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অংশের উষ্ণ অঞ্চলেও এই ফুল হয়। উৎপত্তিস্থল যুক্তরাষ্ট্রে হলেও এই ফুলের চাষ নিয়ে জাপানে গবেষণা হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, থাইল‍্যান্ড, ভারত, চীন, নেপাল, ভূটানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর জনপ্রিয়তা ও বাণিজ‍্যিক উৎপাদন দিন দিন বেড়েই চলেছে। দীর্ঘ প্রায় সতের বছর এই বিদেশী ফুল নিয়ে কাজ করছেন ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ‍্যালয়ের উদ‍্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম‍্যান ও সহযোগী অধ‍্যাপক এ.এফ. এম.জামাল উদ্দিন। তিনি এই ফুলটির নাম দিয়েছেন “নন্দিনী”। নন্দিনীর ইংরেজি নাম লিসিয়ানথাস। জেনেটিনসিয়া পরিবারের এই ফুলটির বিজ্ঞানসম্মত নাম Eustoma grandiflorum.গ্রান্ডিফোরাম জাপানি ভাষায় তরুকোগিকি ও আমেরিকায় “আমেরিকান গোলাপ”নামে পরিচিত। ড: উদ্দিন জাপান থেকে বীজ ও মাটি নিয়ে এসে দু’হাজার সাত সালে সেই মাটিতে ফুলটি ফুটিয়েছিলেন।

ফুলটির বৈশিষ্ট‍্য :–

ঝড়,বৃষ্টি,প্রচন্ড গরম বা অন‍্যান‍্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও এটি অক্ষত থাকে। প্রতিটি ফুল শক্ত ডাঁটা বা বৃন্তের ওপর থাকে বলে কখনো নুয়ে পড়ে না। একটানা পনের দিন পর্যন্ত ফুলটি অবিকল এক থাকে তাই দাম খুব বেশি। ফুলদানিতে জলের সাথে সামান‍্য সুক্রোজ মিশিয়ে এই ফুল পঁচিশ দিন অবধি তাজা রাখা যায়। একটি গাছে একাধিক ফুল ফোটে। প্রতি মৌসুমে একটি গাছ থেকে প্রায় একশ কুড়িটি ফুল পাওয়া যেতে পারে। মজার ব‍্যাপার হল ফুলের সাথে চলে আসা কলিগুলো ঘরের স্বাভাবিক পরিবেশে ফুলদানিতেই কয়েকদিন পর সম্পূর্ণ ফুটে যায়। 

আজ এই পর্বে এই জনপ্রিয় নন্দিনী ফুলগাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা নিয়ে আলোচনা করব

মাটির ব‍্যবস্হাপনা :-

প্রথম মাটি তৈরীর পদ্ধতি 

এক ভাগ নদীর সাদা বালি(river sand/silver sand/horticultural sand),একভাগ বিল্ডিং তৈরীর  লাল বালি ও একভাগ ভার্মিকম্পোস্ট বা এক বছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতা পচা সার।

দ্বিতীয় মাটি তৈরীর পদ্ধতি

একভাগ গার্ডেন সয়েল(হাতের কাছে যে ধরণের মাটি আছে),একভাগ বিল্ডিং তৈরীর লাল বালি ও অর্ধেক পরিমাণ ভার্মিকম্পোস্ট বা একবছরের পুরোনো পচানো গোবর সার বা পাতা পচা সার।

বি:দ্র :– লাল বালি ব‍্যবহারের আগে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।

আলোর ব‍্যবস্হাপনা :– 

এই গাছ সূর্যের আলো ভালোবাসে কিন্তু গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রখর তাপ খুব ভালোবাসে না। এই ফুল অক্টোবরের শেষ থেকে ফোটা শুরু করে। তাই শীতের সময় বাইরের মিষ্টি রোদে এবং গরমকালে উজ্জ্বল আলো আসে এরকম জায়গা বা হালকা ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে।

জলের ব‍্যবস্হাপনা :–

এই গাছ জল খুব ভালোবাসে কিন্তু গাছের গোড়ায় জল জমা একদম পছন্দ করে না। তাই সপ্তাহে একদিন একদম ভরে জল দিতে হবে। তারপর যখন টবের ওপরের মাটি এক ইঞ্চি শুকিয়ে যাবে তখন আবার জল দিতে হবে।

বি:দ্র :– এই গাছে কোনভাবেই বৃষ্টির জল লাগানো যাবে না। বৃষ্টির জল লাগলে ফাঙ্গাস লেগে গাছ মারা যাবে। তাই বৃষ্টির জল থেকে গাছকে অবশ‍্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

খাবারের ব‍্যবস্হাপনা :–

এই গাছ উচ্চ পটাশিয়াম যুক্ত খাবার পছন্দ করে। গাছ প্রতিস্থাপন করার পনের দিন পর পাতলা করে খোল জল অল্প পটাশ মিশিয়ে সাতদিন পর পর দিতে হবে। এছাড়া 13.00.45 এক লিটার জলে এক গ্রাম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে বা একলিটার জলে একগ্রাম নিয়ে তার থেকে আড়াইশ মিলি টবের মাটিতেও দেওয়া যেতে পারে সাতদিন পর পর। এছাড়া আট ও দশ ইঞ্চি টবের জন‍্য এক চামচ সর্ষের খোল ও এক চামচ পটাশ ভালো করে মিশিয়ে প্রতি কুড়ি দিন অন্তর অন্তর মাটিতে ছড়িয়ে দিয়ে জল ঢেলে দিতে হবে।সার দেওয়ার আগের দিন টবের মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ :–

এই গাছে ফাঙ্গাসের আক্রমণ খুব বেশি দেখা যায়। গাছের গোড়ায় বেশি জল জমলে ফাঙ্গাস লেগে পাতা পচে যায় I তাই সাতদিন পর পর যেকোন ফাঙ্গিসাইড সাফ/ব‍্যাভিস্টিন/ব্লাইটক্স/M45 একলিটার জলে একগ্রাম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে সাতদিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।

পাতা খাওয়া পোকার জন‍্য ডাইমেথয়েড 30% কম্পোজিসনের যেকোন পেস্টিসাইড রোগর/রোগর প্লাস/টাফগর এক লিটার জলে তিরিশ ফোঁটা মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে সাতদিন বা দশদিন অন্তর অন্তর।

এই হল নন্দিনী ফুল গাছের সম্পূর্ণ পরিচর্যা। আশাকরি সকলে উপকৃত হবে।তবু এর ভিডিওটি দেখতে চাইলে নিচের দেওয়া লিংকটি দেখার অনুরোধ রইল।সকলকে ধন‍্যবাদ।🙏🙏


Response (2)
  1. M
    Moumita Jana Jan 04

    Khub valo laglo

  2. G
    Giyasuddin Jan 07

    ধন্যবাদ দাদা
    খুব সুন্দর ভাবে আলোচনা করেছো ধন্যবাদ

Leave a comment
Your email address will not be published. Required fields are marked *