তুলসী পাতার নির্যাস থেকে তৈরী জৈব কীটনাশক

Arindam Hait A

তুলসী(ইংরেজি:-holy basil বা tulasi)(বৈজ্ঞানিক নাম:–Ocimum sanctum)একটি ঔষধি গাছ। “তুলসী”কথার অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসীগাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত। ব্রক্ষ্মকৈবর্তপুরাণে তুলসীকে “সীতাস্বরূপা”,স্কন্দপুরাণে “লক্ষ্মীস্বরূপা”,চর্কসংহিতায় “বিষ্ণুপ্রিয়া”,ঋকবেদে “কল‍্যাণী” বলে আখ‍্যায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সর্বত্র তুলসী দেখা যায়। হিন্দুধর্মে তুলসীকে দেবীরূপে পূজা করা হয়,তাই হিন্দুবাড়িতে এই গাছ বেশি দেখা যায়। ভারতে তুলসী বাণিজ‍্যিকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশে বাণিজ‍্যিকভাবে চাষ না হলেও ঔষধি উদ্ভিদ হিসাবে ও ভেষজ চিকিৎসায় এর ব‍্যাপক ব‍্যবহার রয়েছে। জুলাই,আগস্ট বা নভেম্বর,ডিসেম্বর মাসে এতে মঞ্জরী দেখা যায়। সমতলভূমি থেকে শুরু করে হিমালয়ের পাদদেশে প্রায় ছ’হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত এদের জন্মাতে দেখা যায়।

তুলসীর ব‍্যবহার :-

তুলসীর নানা ঔষধি ব‍্যবহার রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে সর্দি,কাশি,ঠান্ডা লাগা ইত‍্যাদি নানা সমস‍্যায় তুলসী ব‍্যবহৃত হয়ে আসছে। ঔষধ হিসাবে এর ব‍্যবহৃত অংশ হল এর রস,পাতা এবং বীজ। আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসায় তুলসীর ব‍্যাপক ব‍্যবহার রয়েছে বিশেষত: ভারতীয় উপমহাদেশে।

আজ এই পর্বে তুলসী পাতার নির্যাস থেকে একটি জৈব কীটনাশক তৈরীর সম্পূর্ণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

প্রয়োজনীয় উপকরণ :–

একশ গ্রাম কাঁচা তুলসীপাতা, চার লিটার জল ও পাঁচগ্রাম গুঁড়ো সাবান বা তরল সাবান।

বি:দ্র:–

এক্ষেত্রে পুকুরের জল, কলের জল, কুয়োর জল, মিনারেল ওয়াটার, ডিস্টিল ওয়াটার, বৃষ্টির জল এগুলো সরাসরি ব‍্যবহার করা যাবে। কিন্তু কর্পোরেশনের পাইপ লাইনের জল ব‍্যবহার করতে হলে ওই জল উন্মুক্ত পাত্রে বারো ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এর ফলে ওই জলের মধ‍্যে থাকা ক্লোরিন,ফ্লুরিন উবে যাবে। তারপর ওই জল ব‍্যবহার করা যাবে।

পদ্ধতি:–

একশ গ্রাম কাঁচা তুলসী পাতা ভালো করে বেটে একটা মিহি পেস্ট তৈরী করে নিতে হবে এই পেস্ট চার লিটার জলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে। সন্ধ‍্যা ছটা থেকে সকাল ছটা এই বারো ঘন্টা রেখে দিতে হবে। বারো ঘন্টা পর এই মিশ্রণ  ছেঁকে নিতে হবে। ছেঁকে নেওয়ার পর এর থেকে কিছুটা জল আলাদা পাত্রে নিয়ে ওর মধ‍্যে পাঁচ গ্রাম গুঁড়ো সাবান বা পাঁচ টেবিল চামচ তরল সাবান(শ্যাম্পু) মিশিয়ে নিতে হবে। গুঁড়ো সাবান মেশালে সেক্ষেত্রে পুনরায় মিশ্রণটি ছেঁকে নিতে হবে। কারণ গুঁড়ো সাবানে বেশ কিছু পদার্থ মিশে থাকতে পারে যেগুলো জলে দ্রবীভূত হয় না। এই মিশ্রণটি পুনরায় আগের জলের সাথে মিশিয়ে নিলেই তৈরী হল ব‍্যবহারোপযোগী জৈব কীটনাশক। এই কীটনাশক দিনের বেলা এক সপ্তাহ পর পর সমস্ত গাছে স্প্রে করতে হবে

বি:দ্র:–

এই কীটনাশকটি একবারই ব‍্যবহার করা যাবে। কোনভাবেই রেখে দিয়ে ব‍্যবহার করা যাবে না।

পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ :–

এই কীটনাশক ব‍্যবহারে ফলের মাছি, ল‍্যাদাপোকা লালমাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এই হল তুলসী পাতার নির্যাস থেকে জৈব কীটনাশক তৈরীর সম্পূর্ণ পদ্ধতি। আশাকরি সকলের অনেক উপকারে আসবে আজকের লেখাটি। তবু এই ভিডিওটি দেখতে হলে নিচে দেওয়া লিংক ফলো করার অনুরোধ রইল। সকলকে অনেক ধন‍্যবাদ।🙏🙏🙏


Leave a comment
Your email address will not be published. Required fields are marked *