আজ আমি এই পর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করব। তোমরা যারা বাগান কর বা করছ, এবং যারা নতুন বাগানি তারা অনেকেই ডিমের খোসা সার হিসাবে ব্যবহার কর বা করতে চাও, অথচ অনেকের মনেই সম্যক ধারণা নেই ডিমের খোসার সঠিক প্রয়োগবিধি সম্বন্ধে। তাই অনেকের মনেই একটা দ্বিধা কাজ করে যে আদৌ কি ডিমের খোসা সার হিসাবে ব্যবহার করা যায় বা ব্যবহার করা উচিত কিনা। এই সমস্ত বন্ধুদের কথা মাথায় রেখেই আজ আমি এই বিষয়ে আলোচনা করব যাতে ডিমের খোসার সঠিক ব্যবহার বিধি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা দিতে পারি।
ডিমের খোসার ব্যবহার পদ্ধতির আগে জেনে নেওয়া দরকার যে এই ডিমের খোসা আমরা কেন ব্যবহার করব এবং এর থেকে গাছ কি ধরণের পুষ্টিমৌল পায়।
এটার গুরুত্ব বোঝাবার আগে গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌলগুলো সম্পর্কে একটু আলোকপাত করছি।
গাছের পুষ্টিমৌল প্রধানত দু প্রকার।
1) মাইক্রোনিউট্রিয়েন্স
2) ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্স।
এই ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্সকে আবার দু ভাগে ভাগ করা যায়।
1) প্রধান পুষ্টিমৌল
2) মাধ্যমিক পুষ্টিমৌল
প্রধান পুষ্টিমৌল :–
প্রধানত তিনটি।
1)নাইট্রোজেন
2)ফসফরাস ও
3)পটাশ।
মাধ্যমিক পুষ্টিমৌল :–
প্রধানত তিনটি।
1)ক্যালসিয়াম
2)ম্যাগনেসিয়াম ও
3)সালফার।
আজ এর মধ্যে মূলত: ক্যালসিয়াম নিয়ে আলোচনা করব। কারণ ডিমের খোসা থেকে গাছ খুব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিমৌল ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকে।
ডিমের খোসায় থাকা ক্যালসিয়ামের পরিমাণ :–
এক গ্রাম ডিমের খোসায় 40% ক্যালসিয়াম থাকে।
ডিমের খোসায় থাকা NPK এর পরিমাণ :–
এর মধ্যে থেকে আমরা 1.19% নাইট্রোজেন, 0.38% ফসফরাস ও 0.14% পটাশ পেয়ে থাকি।
গাছের ওপর ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা :–
উদ্ভিদদেহ যে কোষ দ্বারা গঠিত সেই কোষপ্রাচীর(ক্যালসিয়াম পেকটেড) এর মূল উপাদান হল এই ক্যালসিয়াম। উদ্ভিদদেহে শর্করা সংবহন করতে ক্যালসিয়াম সাহায্য করে। এছাড়া শিম্ব গোত্রীয় উদ্ভিদ যেমন শিম,বরবটি,ফ্রেঞ্চ বিনস ইত্যাদি গাছের শিকড়ে অর্বুদ তৈরীতে অপরিহার্য যার ফলে রাইজোবিয়াম অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন বন্ধনে সক্ষম। যে সব জৈব অ্যাসিড গাছের জন্য ক্ষতিকর, ক্যালসিয়াম সেই সমস্ত জৈব অ্যাসিডকে প্রশমিত করে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও ক্যালসিয়াম সাহায্য করে। মাটির অম্লত্ত্ব কমিয়ে মাটি থেকে নাইট্রোজেন, আয়রণ,বোরণ,জিঙ্ক এই সমস্ত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্স গাছকে সহজে গ্রহণ করতে সাহায্য করে। মাটির phঠিক না থাকলে মাটিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্স থাকা সত্ত্বেও গাছ তা গ্রহণ করতে পারে না। তাই ক্যালসিয়াম দিলে গাছের ph ঠিক হয়ে যায় তখন গাছ এই মাইক্রোনিউট্রিয়েন্স ঠিকমতো নিতে পারে। যেহেতু অনেকক্ষেত্রে মাটির ph ঠিক থাকে না তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাজারে জলে দ্রবনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্সটাই সহজলভ্য যা আমরা পাতায় সার হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। ক্যালসিয়াম মাটির গ্রন্থন বা structure খুব সুন্দর করে দেয়। এছাড়া যদি কোন পুষ্টিমৌল থেকে উদ্ভিদের কোন বিষক্রিয়া দেখা দেয় তখন অনেকাংশে ক্যালসিয়ামের সঠিক পরিমাণ প্রয়োগে সেই বিষক্রিয়া থেকে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত লক্ষণ :–
এর অভাবে গাছের ডগার কচি পাতা শুকিয়ে যায়। গাছের শিকড় ও গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। শিকড়ের রঙ বাদামী বর্ণের হয়ে যায়। পাতা কুঁকড়ে যায়(বোরণের অভাবে ও হয়)। মাটির অম্লত্ত্ব খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। অতএব বোঝাই যাচ্ছে গাছের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা ঠিক কতখানি।
সার হিসাবে ডিমের খোসা উপযোগী করার পদ্ধতি :–
প্রথমে ডিমের খোসা এমনভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যাতে খোসার ভেতরে থাকা পিচ্ছিল অংশ ও খুব ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। এরপর সেই খোসাগুলো মিক্সিতে খুব ভালোকরে মিহি গুঁড়ো করে নিয়ে একটা সূক্ষ্ম চালুনি দিয়ে চেলে নিতে হবে। বাকী যা পড়ে থাকবে সেটা আবার গুঁড়ো করে নিতে হবে।
বি:দ্র :– খোসা এমনভাবে গুঁড়ো করতে হবে যাতে এমন কোন টুকরো না থাকে যা পিঁপড়ে মুখে করে বয়ে নিয়ে যেতে পারে। কখন ই ডিমের খোসা হাত দিয়ে ভেঙে সরাসরি টবে দেওয়া উচিত নয়।
গাছে ব্যবহারের নিয়ম :–
এই গুঁড়োর সাথে হাফ চামচ নিম খোল বা মহুয়া খোল বা থাইমেট ভালোকরে মিশিয়ে আট ও দশ ইঞ্চি টবের জন্য এক টেবিল চামচ ও বারো ইঞ্চি টবের জন্য দেড় টেবিল চামচ নিয়ে মাটি ভালোকরে খুশে এই গুঁড়ো ছড়িয়ে আবার মাটি চাপা দিয়ে জল ঢেলে দিতে হবে।
জলে দ্রবনীয় ক্যালসিয়াম সার তৈরীর পদ্ধতি :–
একটা বোতলে এক লিটার ডিসটিল্ড ওয়াটার বা মিনারেল ওয়াটার বা ট্যাপ ওয়াটার নিয়ে ওর সাথে পঞ্চাশ গ্রাম ডিমের খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে বোতলের ছিপি ভালোকরে আটকে বিয়াল্লিশ দিন রেখে দিলেই তৈরী জলে দ্রবনীয় ক্যালসিয়াম সার।
ব্যবহার বিধি:–
এক কাপ ডিমের খোসা মিশ্রিত জল এক লিটার আলাদা ওই একই জলের সাথে মিশিয়ে সব গাছে স্প্রে করা যেতে পারে বা মাটিতে ও দেওয়া যেতে পারে। এই জলে দ্রবনীয় সার যে জলে তৈরী করা হয়েছে সেখান থেকে এক কাপ নিয়ে নেওয়ার পর আবার ওই বোতলে এক কাপ ওই একই জল ভরে রাখতে হবে। পুনরায় এই একইভাবে ব্যবহার করতে হবে।
বি:দ্র:–কখনও এই তিনপ্রকার জল মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ:- এক কাপ সার মিশ্রিত ডিসটিল্ড ওয়াটার নেওয়ার পর ওর সাথে মিনারেল বা ট্যাপ ওয়াটার এভাবে করা যাবে না।
এইভাবেই ডিমের খোসাকে ক্যালসিয়াম পুষ্টিমৌল হিসাবে ব্যবহার করা সম্ভব। আশাকরি আজকের পর্বের এই আলোচনায় সবাই উপকৃত হয়েছ। তবু ও যদি এর ভিডিও দেখতে চাও তবে নিচের লিংক ফলো করার অনুরোধ রইল।ধন্যবাদ সকলকে।🙏🙏🙏
খুব ভালো লাগলো দাদা। ধন্যবাদ।
তথ্যটি খুবই helpful
ধন্যবাদ
খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে ছোট।
অসাধারণ দাদা বাবু।চালিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে অভিনন্দন।
খুব ভালো গাইড লাইন দিলে।