দৈনন্দিন কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে ও আমরা যারা গাছ ভালোবাসি তারা নিশ্চয়ই স্বীকার করবে যে সারাদিনের কাজকর্মের পর শারীরিক,মানসিক ক্লান্তির অনেকটাই লাঘব করে আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দিতে পারে আমাদের চারপাশে ঘিরে থাকা সবুজের সমারোহ। তাই আমরা বাড়ীর সামনে,ছাদে পছন্দ অনুযায়ী বাগান করার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি বুক ভরে নিতে পারি ভরপুর বিশুদ্ধ পরিমল বাতাস। কিন্তু অনেক সময় প্রকৃতির খামখেয়ালীপনা আমাদের এই বাগানে ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব বিস্তার করে। তাই নিজেদের সন্তানস্নেহে,পরম মমতায় পালিত গাছগুলোকে যখন প্রকৃতির রুদ্ররোষের(ঘূর্ণিঝড়) স্বীকার হতে দেখি তখন মন যে কতটা ভারাক্রান্ত হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই পরবর্তীকালে যাতে আমরা আমাদের বাগানের গাছগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি সেই কথা মাথায় রেখেই আজকের এই পর্ব।
কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া মাত্র গাছ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াই ভালো। তবে এক্ষেত্রে ছোট টবের গাছ গুলোকে সরানো সম্ভব হলেও বড় টবের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। এদের তাই ক্ষতি হওয়ারও প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায়। এই গাছগুলোকে দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে আবার সুস্থ করে তোলার পদ্ধতি আজ আমার আলোচ্য বিষয়।
ঝড় থেমে যাওয়ার পরেও কয়েক দিন ধরে একটা দমকা হাওয়ার দাপট চলতে থাকে। এই দমকা হাওয়ার গতিপ্রবাহ কখনও একমুখী হয় না। চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে এই দমকা হাওয়া প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে এই সময় কোন গাছ বাইরে থাকলে হাওয়ার দাপটে তার গোড়া নড়ে যাওয়ার ও টব ভেঙে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই এরকম পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্হায় না আসা পর্যন্ত গাছ নিরাপদ স্থানে রাখাই শ্রেয়। তবে সাবধানতা অবলম্বন হেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি আমাদের মেনে চলতে হবে যাতে গাছের নূন্যতম ক্ষতি ও আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। এজন্য আমাদের কয়েকটি উপাদানের প্রয়োজন হবে I উপাদানগুলি নিম্নে বর্ণিত……
পদ্ধতি :–
এর জন্য চার লিটার জলের দরকার। এর থেকে এক লিটার জলের সাথে এক গ্রাম যেকোন ফাংগিসাইড, এক গ্রাম রুট হরমোন,এক গ্রাম বা এক মিলি হিউমিক অ্যাসিড এবং এক মিলি বা দুমিলি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভালো করে মিশিয়ে আরো তিন লিটার জল এর সাথে মিশিয়ে তার থেকে আড়াইশো মিলি করে সব গাছের গোড়ায় দিয়ে দিতে হবে। এই মিশ্রণটা দেওয়ার আগে যেসব গাছ ভেতরে রাখা ছিল সেই গাছ গুলোকে ভালো করে স্নান করিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে। এরপর যেকোন ফাংগিসাইড সাফ/ম্যানসার/ব্যাভিস্টিন/ব্লাইটক্স/M45 এক লিটার জলে এক গ্রাম ভালো করে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
উপরোক্ত উপাদান গুলির প্রয়োজনীয়তা:–
1) হাইড্রোজেন পার অক্সাইড :–
গাছের শিকড়ে কোন ব্যাকটিরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণ হলে তা ঠিক করে এবং মাটির মধ্যে অক্সিজেনের প্রবাহ স্বাভাবিক করে।
2) হিউমিক অ্যাসিড :–
গাছের জায়গা বারবার পরিবর্তন হেতু গাছের মধ্যে যে স্ট্রেস হয় তার থেকে গাছকে স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরিয়ে আনে।
3) ফাংগিসাইড :–
গাছের গোড়া নড়ে গিয়ে বা ভেঙে গিয়ে ছত্রাক আক্রমণের সম্ভাবনা প্রতিরোধ করে।
4) রুট হরমোন :–
গাছের গোড়া নড়ে গিয়ে বা ভেঙে গিয়ে যদি শিকড় নষ্ট হয়ে যায় তবে রুট হরমোন প্রয়োগে আবার নতুন শিকড় তৈরী হয়।
উপরোক্ত পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অনুসরণ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বাগানের গাছগুলোকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব। এর ভিডিওটি দেখতে হলে নিচের দেওয়া লিংক ফলো করার অনুরোধ রইল।সকলকে ধন্যবাদ।🙏🙏
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। ❤️
একটা জিনিস একটু ক্লিয়ার করে দাও প্লিজ।
“এই মিশ্রণটা দেওয়ার আগে যেসব গাছ ভেতরে রাখা ছিল সেই গাছ গুলোকে ভালো করে স্নান করিয়ে গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে।”
1) ভেতরে রাখা গাছগুলো সাধারণ জল দিয়ে স্নান করাবো নাকি ঐ মিশ্রণ দিয়ে?
2) গাছের গোড়া ভিজিয়ে নিতে হবে বলতে সাধারণ জল দিয়ে নাকি ওই মিশ্রণ দিয়ে? সাধারণ জল দিয়ে যদি হয় তাহলে জল দেবার পরে ওই মিশ্রণ দেবো গোড়ায়?