আমরা প্রায় সবাই জানি যে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে যেকোন রান্না সুস্বাদু বানাতে কাঁচালঙ্কা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।রসনার নিরিখে এই ছোট্ট অথচ দারুণ কার্যকরী সবুজ ফলটি এককথায় প্রকৃতির এক অনবদ্য সৃষ্টি। বলা যায় রান্নার স্বাদ বর্ণ ও গন্ধের চাবিকাঠি হল এই লঙ্কা। কাঁচালঙ্কা তার ঝাল স্বাদ ও তীক্ষ্ণ গন্ধের জন্য ভারতীয় রান্নাতে সবজির পাশাপাশি মশলা হিসাবে ও ব্যবহৃত হয়।
কাঁচালঙ্কার উৎস:–
কাঁচালঙ্কার আদি উৎস হল মধ্য আমেরিকা ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মেক্সিকান রান্নায় মুখ্য মশলা হিসাবে কাঁচালঙ্কার ব্যবহার হয়ে আসছে। এরপর মূলত ষোল ও সতের শতকে স্প্যানিশদের হাত ধরে লঙ্কা আসে ইউরোপে ও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ইউরোপ ছেড়ে স্প্যানিশ ফিলিপাইন কলোনীগুলোতে ও পাড়ি দেয় কাঁচালঙ্কা। পর্তুগিজ অভিযাত্রীদের মাধ্যমে কাঁচালঙ্কা ভারত সহ বিশ্বের আরও নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিহাস বলছে মায়া ও আজটেক সভ্যতার মানুষদের মধ্যে কোকো পানীয়তে সুগন্ধের কারণে ব্যাপকভাবে কাঁচালঙ্কা ব্যবহার করা হত। বুলগেরিয়া,সার্বিয়া ও ম্যাসিডোনিয়াতেও কাঁচালঙ্কা যথেষ্ট জনপ্রিয়। ইটালিয়ান খাবারের মূল উপাদানই হল কাঁচালঙ্কা। ইথিওপিয়ার জাতীয় রান্নাতে কাঁচালঙ্কা ব্যবহৃত হচ্ছে সম্ভবত আঠারোশো সাল থেকে।
রাসায়নিক উপাদান :–
লঙ্কার মধ্যে কিছু রাসায়নিক যৌগ আছে যার মধ্যে ক্যাপসাইসিন অন্যতম। লঙ্কাতে যে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায় তার অন্যতম কারণ এই যৌগ। এছাড়াও কাঁচালঙ্কায় বিস্ময়করভাবে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। রেকমেন্ডেড ডায়েটারি অ্যালাউন্সের বিচারে একশো গ্রাম কাঁচালঙ্কায় থাকে শর্করা, তৈল জাতীয় পদার্থ, ফাইবার, ভিটামিন এ, বি, সি, কে, ই, দশটি খনিজ লবণ এবং তিনটি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট। কাঁচালঙ্কাতে ভিটামিন এ, বিটা-ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন, লিউটেন, জিয়াজ্যানথিন এবং ক্রিপটোজ্যানথিন এর মতো ফ্ল্যাভোনয়েডস প্রচুর পরিমাণে থাকে। এছাড়াও কাঁচালঙ্কায় যথেষ্ট পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রণ ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো মিনারেল আছে।
আজ আমি এই পর্বে কাঁচালঙ্কা দিয়ে একটি জৈব কীটনাশক তৈরীর সম্পূর্ণ পদ্ধতি আলোচনা করব।
প্রয়োজনীয় উপকরণ :–
পঞ্চাশ গ্রাম ঝাল কাঁচালঙ্কা ও এক লিটার জল। এক্ষেত্রে পুকুরের জল,কলের জল,কুয়োর জল,বৃষ্টির জল,মিনারেল ওয়াটার সরাসরি ব্যবহার করা যাবে।কিন্তু কর্পোরেশনের পাইপ লাইনের জল ব্যবহার করার আগে একটা পাত্রে ওই জল নিয়ে উন্মুক্ত অবস্থায় বারো ঘন্টা বা চব্বিশ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এর ফলে জলে থাকা ক্লোরিন, ফ্লুরিন উবে যাবে। এরপর ওই জল ব্যবহার করা যাবে।
বি:দ্র :– এক্ষেত্রে অবশ্যই ঝাল কাঁচালঙ্কা নিতে হবে। যে সমস্ত লঙ্কায় ঝাল থাকেনা বাহ খুব সামান্য ঝাল থাকলে সেই সমস্ত লঙ্কা নেওয়া যাবে নাI ঝাল লঙ্কা ছাড়া এই পদ্ধতি কার্যকর হবে না।
পদ্ধতি :–
পঞ্চাশ গ্রাম ঝাল কাঁচালঙ্কা এক লিটার জলে বারো ঘন্টা(সন্ধ্যা ছটা থেকে সকাল ছটা) ভিজিয়ে রেখে তুলে নিয়ে বেটে একদম মিহি পেস্ট বানিয়ে উপরোক্ত এক লিটার জলে(কাঁচালঙ্কা ভেজানো জল)ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা পাতলা সুতির কাপড় দিয়ে তিনবার ছেঁকে নিতে হবে যাতে মিশ্রণে কোন কঠিন পদার্থ না থাকে। এই মিশ্রনটা কীটনাশক হিসাবে সব গাছে ব্যবহার করা যাবে। গাছের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে লঙ্কা ও জলের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে হবে।
প্রয়োগবিধি :–
এই কীটনাশক সকাল আটটা থেকে নটার মধ্যে যখন সূর্যের তীব্রতা কম থাকে সেই সময় স্প্রে করতে হবে। এছাড়া বিকাল পাঁচটার পর গাছের পাতার ওপরে ও তলায় স্প্রে করা যেতে পারে। ব্যবহার করার পর বেশি থাকলে গাছের গোড়ায় দেওয়া যাবে কিন্তু কখনই রেখে দিয়ে পরে ব্যবহার করা যাবে না।
এই কীটনাশক তিনদিন পর পর ব্যবহার করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া পাঁচদিন বা দশদিন অন্তর এই কীটনাশকের সাথে এক ছিপি নিমতেল মিশিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাওয়া যায়।
এই কীটনাশক সাদামাছি, মিলিবাগ, অ্যাফিডস এবং মাকর জবার সমস্তরকম পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রদ।
এই হল কাঁচালঙ্কা থেকে জৈব কীটনাশক তৈরীর সম্পূর্ণ পদ্ধতি। যে সব বন্ধুরা বাগানে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে আগ্রহী নও তাদের আজকের পর্বটি অনেক উপকারে আসবে আশা রাখি। এর ভিডিওটি দেখতে হলে নিচের লিংক অনুসরণ করার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ।🙏🙏
ধন্যবাদ সঠিক উপায় জানানোর জন্য। ❤️🙏🏻
তবে একটা প্রশ্ন আছে দাদা, স্প্রে করার সময় তো আমাদের শরীরেও ছিটেফোঁটা লাগে, তাহলে তাতে জ্বালা করবে না?